৩৬৫ দিন। ঝাড়খণ্ডের জলে প্লাবিত হচ্ছে বাংলা আর ম্যান মেড এই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটু আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। ঝাড়খণ্ডের একাধিক জলাধার থেকে বাংলার সঙ্গে কোন রকম আলোচনা না করেই বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে জানালেন মমতা।
ম্যান মেড বন্যা। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়া সত্বেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন্দ্রের একতরফা জল ছড়ায় বাংলায় ফের তৈরি হল ম্যান মেড বন্যা পরিস্থিতি। বাংলার উপর থেকে নিম্নচাপ অক্ষরেখা আংশিকভাবে সরে গিয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলেও দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় বন্যার অশনি সংকেত। নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে না করেই জল ছাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। সেইসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের সেই আশঙ্কাকে গুরুত্ব না দিয়েই গতকাল রাতে এবং আজ সকাল থেকেও মাইথন পাঞ্চেত তেনুঘাট সহ প্রায় সবকটি জলাধার থেকেই বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ল ডিভিসি। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে দাঁড়িয়ে এই বক্তব্য রাখার পরে ১২ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি।
জেলাশাসকদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীরমমতা জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে ফোন করে বাংলায় উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। হঠাৎ করেই ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার থেকে যেভাবে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে তার ফলে বাংলার একটা বড় অংশ প্লাবিত হতে চলেছে বলে জানিয়েছি হেমন্তকে। আমি নিজে গোটা পরিস্থিতির উপরে প্রতিমুহূর্তে মনিটরিং করছি এবং দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির জেলা শাসকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। সমস্ত জেলা শাসক কে নির্দেশ দিয়েছে আগামী ৩-৪ দিন পরিস্থিতির উপরে কঠোর নজরদারি রাখার পাশাপাশি সতর্ক থাকার জন্য। সেইসঙ্গে যাতে অবাঞ্ছিত কোন ঘটনা না ঘটতে পারে তার জন্য যে কোন ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছি জেলা শাসকদের।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল অর্থাৎ শনিবার গভীর রাত থেকেই জল ছাড়া শুরু হয়েছে। মাইথন জলাধার থেকে ইতিমধ্যেই ৬ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিনই সেখান থেকে এই পরিমাণ জল ছাড়া হয়। ফলে নিয়মিত পরিমান এই জল ছাড়ায় কোনো সমস্যা না থাকলেও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়া হয়েছে। আশঙ্কা বাড়িয়েছে পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া ১ লক্ষ ১৪ হাজার কিউসেক জল। কারণ মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া জল ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায় এসে জমা হয় দুর্গাপুর ব্যারেজে। পশ্চিম বর্ধমানে বৃষ্টি বাড়লে সেখান থেকেও অতিরিক্ত জল ছাড়তে হবে। ইতিমধ্যে সেখান থেকে অন্তত ৯৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে বলে ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে বাংলার উপর থেকে নিম্নচাপ অক্ষরেখার সরে গিয়ে ঝাড়খণ্ডের উপরে অবস্থান করায় গত দুদিন ধরে ঝাড়খন্ডে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হলেও আজ সকাল থেকে কমেছে বৃষ্টির পরিমাণ। ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার থেকে গতকাল দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। আজ সকালেও জল ছেড়েছে তেনুঘাট। আজ রাতের মধ্যেই এই বিপুল জলের চাপ দুর্গাপুর ব্যারেজে পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে রাজ্য সরকার। বৃষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে না আসলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী পরশু নাগাদ হাওড়ার আমতা সহ বিপুল এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে ডিভিসির ছাড়া এই বিপুল জল। এই পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত রাজ্যের সেচ দপ্তরের সচিব প্রভাত কুমার মিশ্রের কাছ থেকে প্রতি মুহূর্তে খোঁজ নিচ্ছেন মমতা নিজে। পশ্চিম বর্ধমান সহ হাওড়া পূর্ব বর্ধমান হুগলি এবং সংলগ্ন জেলাগুলির জেলা শাসকদেরও সজাগ থেকে প্রতিমুহূর্তে পরিস্থিতির উপরের নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকে।