ছাত্র- যুবর জনসমুদ্রে মমতা
৩৬৫ দিন। আমাকে অনেক গালিগালাজ করেছেন, অসম্মান করেছেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে বদলা নিইনি। বদলা নয়, বদলের কথা বলেছি। কিন্তু আজ বলছি, এবার যা করার দরকার, ভাল বুঝে করবেন। আমি অশান্তি চাই না, কিন্তু আপনাকে যারা রোজ কামড়াচ্ছেন, তাদের কামড়াতে বলছি না, কিন্তু ফোঁস তো করতে পারেন। রামকৃষ্ণ দেব যেমন বলেছিলেন ফোঁস করতে বারণ নেই, তেমনভাবে আগামী দিন আপনাদের কাজ হল, চক্রান্তকারীদের ফোঁস করতে শিখুন। সহ্যের সীমা ছাড়ালে আমি কী করতে পারি, জানেন না। আমার জন্ম হয়েছে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। আর জি করের ঘটনায় একেবারে প্রথম দিনেই যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোন আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে ভবিষ্যতে ওদের পাসপোর্ট বা চাকরিতে সমস্যা হতে পারে। অথচ দিল্লি পুলিশ আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। এভাবেই আজ ২৮ অগাস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডের সমাবেশ থেকে ভাজপার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন মমতা।
আজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে প্রত্যেক বছরের মতো মেয়ো রোডের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে তুলে আনেন কিভাবে আরজিকরের একটি ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে সামনে রেখে বাংলায় তার সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র তৈরি করে চলেছে সিপিএম এবং ভাজপা। সেই সঙ্গে আরজিকরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে যেমন মমতা বারে বারে এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন, তাকে সরকারিভাবে আরো জোরদার করার লক্ষ্যে আগামী 10 দিনের মধ্যে রাজ্য বিধানসভায় বিল এনে ধর্ষণের মতো ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস করানোর ঘোষণা করেন তিনি।
মমতা আজ বলেন,
আরজি করে যে বোনটি নির্যাতিতা হয়েছে , দেশের সব প্রান্তের মেয়েরা যেভাবে নির্যাতিতা হচ্ছে, আমি সকল নির্যাতিতাদের জন্য আজকের দিনটি উৎসর্গ করছি। আমরা বিচার চাই, ওরা লাশ চাই। ওরা আন্দোলনকে জল ঢেলে দিতে চাইছে। আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্
ছে।
ওরা কিন্তু আন্দোলনটাকে জল ঢেলে দিয়ে আসল আন্দোলন থেকে চক্রান্তের খেলায় নেমেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বাংলাকে বদনাম করার খেলায় নেমেছে। আমরা বিচার চাই শাস্তি চাই ওরা ডেডবডি চায়
।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, বাংলায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।
আজকের দিন আরজি করের নির্যাতিতা বোনকে উৎসর্গ করতে চাই। এর মাঝে একাধিক স্থানে এমন ঘটনা ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশের ঘটনায় পদত্যাগ করেনি রাজস্থানের ঘটনায় পদত্যাগ করেনি আসামের ঘটনায় ঘটনায় পদত্যাগ করেনি মধ্যপ্রদেশের ঘটনায় পদত্যাগ করেনি এমনকি মনিপুরের পরিবারগুলোর কাছে ছুটে যায়নি।
খুনী, অত্যাচারী, ধর্ষণকারীকে কেন ছাড়া হবে? আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলাম। সতর্ক করলাম। ন্যায় সংহিতা একটা আইন করলেন। আমাদের হাতে আইনের ক্ষমতা নেই। থাকলে সাত দিনে ফাঁসি করতাম। দুর্বৃত্ত তাতে ঠান্ডা হয়ে যাবে।
ধর্ষকদের জন্য ন্যায় সংহিতায় ১০ বছর, ১২ বছরের ধাপ রয়েছে। এর কী প্রয়োজন ছিল। রাজ্যের হাতে ক্ষমতা নেই। রাজ্যের হাতে ক্ষমতা থাকলে সাত দিনে করে দেব আমি। যারা ধর্ষণ করবে, তাদের একমাত্র সাজা ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি। ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি, আর কিছু নয়। এই একটা কাজ করলে মনে রাখবেন, সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
আমরা এমন কোনও কথা বলি না। কাজ করি না, যা মানুষের পক্ষে নয়। আমি বলে যাচ্ছি, আগামী সপ্তাহে বিধানসভার অধিবেশন ডাকব স্পিকারকে বলে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসির বিল পাস করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব। আমি জানি, রাজার পাট, রাজাবাবু কিছু করবেন না। না করলে, মনে রাখবেন, মেয়েরা, বোনেরা, রাজভবনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গিয়ে বসে থাকবেন। এই বিল সই করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দায়িত্ব সারলে হবে না।
রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, আপনি বড় বড় কথা বলেন কী করে? আপনার রাজভবনের মহিলা কর্মীকে আপনি নির্যাতন করেন। সেই মেয়েটা বিচার পায়নি। ট্রমাটাইজড হয়ে গিয়েছিল। তাকে আমি অন্য জায়গায় চাকরি দিয়েছি, সরিয়ে নিয়ে গিয়েছি, থাকার জায়গা করে দিয়েছি। লজ্জা নেই!
কামদুনির ক্ষেত্রে আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম। এখনও দেখি অনেককে চোর-ডাকাতকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তেমন কামদুনির ফাইলও আমার কাছে আসে। বলা হয়, ১০ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে এবার ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি বলি কেন ছাড়ব? ধর্ষক কেন ছাড় পাবে?
৯ তারিখ ঝাড়গ্রাম থেকে ফিরছিলাম, ১০ অগাস্ট সকালে পৌঁছে যা যা করনীয় সব করা হয়েছে। আরজি করে যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। যাতে দেরি না হয়, কোন ভুল না হয় তার জন্য সব রকম চেষ্টা সরকারের তরফে করা হয়েছে। আমি সাত দিনের মধ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে ফাঁসি চেয়েছিলাম।
আজ ১৬ দিন হয়ে গেল, কোথায় গেল বিচার?জবাব দাও সিবিআই। আগামী শুক্রবার কলেজে কলেজে ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করবেন পড়ুয়ারা।
আজ বনধ ডেকেছে বিজেপি। কারণ ওদের বডি চাই। ওরা আসল আন্দোলনে জল ঢেলে, চক্রান্তে নেমেছে। বাংলায় চক্রান্ত করার খেলায় নেমেছে। আজও পুলিশকে মারধর করেছে। ট্রেনের সিগন্যাল বিভ্রাট করা হয়েছে। বাস আটকেছে। রেল হোক বা সিবিআই সবটাই বিজেপি চালায়। এমন কেন্দ্রীয় সরকার দেখিনি।
বনধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কীসের বনধ? বনধ চাইলে যাও, আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। খালি এজেন্সির ব্যবহার। কাল ডেডবডি নিতে এসেছিল। কারও চোখ নষ্ট করেছে। কারও পা ভেঙেছে। কারও কানে মেরেছে। পুলিশ সংযত থেকেছে। পুলিশ ওদের চক্রান্ত ভেস্তে দিয়েছে। ওরা ডেডবডি নিতে এসেছিল। পুলিশ নিজের রক্ত দিয়ে ওদের চক্রান্ত আটকাচ্ছে।
বনধ সংক্রান্ত মামলাতে কলকাতা হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর বক্তব্য, মহারাষ্ট্রের বদলাপুর কাণ্ডের পর বিরোধীরা বনধ ডাকলে, সেই বনধ বাতিল করেছে হাই কোর্ট। একইভাবে কেরল হাই কোর্টও বনধ বাতিল করেছে। অথচ কলকাতা হাই কোর্ট বাতিল করেনি। এবার সময় এসেছে একটু সজাগ হন। কোনও বিচারককে নিয়ে আমি কিছু বলব না। কিন্তু আইনজীবী হিসাবে রায় নিয়ে বলার অধিকার আমার আছে। সাধারণ মানুষ যেন আদালতে গিয়ে সুবিচার পায়। বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে।
মহারাষ্ট্র আদালত বনধকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। কলকাতায় একটা জনস্বার্থের মামলা হয়েছিল। একটু নড়েচড়ে বসা কি দরকার ছিল না? আইনজীবীদের বলব, আদালতে বিজেপিকে ছেড়ে দেবেন না। যাতে সাধারণ মানুষ বিচার পায়।
ছাত্রদের নির্বাচন এবার হওয়া উচিত। এখন সেমেস্টার সিস্টেম। ব্রাত্য বসুকে বলব আস্তে আস্তে সেই অনুযায়ী সিস্টেম তৈরি করে নিতে। এইসব একটু শান্ত হোক, মিটে যাক। তার পর পুজোর হয়ে গেলে আসতে আসতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা করিয়ে দেব।
ছাত্রভোট করাতে হবে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোটটা করান। পুজোর পর হতে পারে। আলোচনা করে আমি জেলায় জেলায় নির্দেশ দিয়ে দেব।
আজকে আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা আসছিল, তাঁদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বনধ ডেকে ট্রেন আটকে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। কীসের বনধ। যদি বনধ করতে হয় তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বনধ করো। যিনি আজ পর্যন্ত শুধু এজেন্সি লাগিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার করা ছাড়া কিছুই করেননি।