সোশ্যাল মিডিয়ায় জাল চিঠি প্রসঙ্গে সিবিআই
৩৬৫ দিন। নয়াদিল্লি। আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিতার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলে অথবা তার যৌনাঙ্গে ১৫০ গ্রাম বীর্য পাওয়া গিয়েছে বলে যেমন একের পর এক ভুয়ো রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘুরে বেড়াচ্ছিল প্রত্যেকের মোবাইলে অথবা ফেসবুক পেজের ওয়ালে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এগুলির সব ভুয়ো। বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বানানো হয়েছিল এই সমস্ত মিথ্যে রিপোর্ট। ভুয়ো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছড়িয়ে বাংলাকে অশান্ত করার চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পরে এবার টার্গেটে সিবিআই।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তে নামার পর থেকে নাকি রাজ্য প্রশাসন এবং হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তীব্র চাপ তৈরি করা হচ্ছে তদন্তকে বিপথে চালিত করার জন্য। এই মর্মে রীতিমতো সিবিআইয়ের লেটার হেড ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে বলে ভুয়ো চিঠি ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার পরে তড়িঘড়ি দিল্লিতে সিবিআই সদর দপ্তর থেকে লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হল এমন কোন চিঠি কোন সিবিআই আধিকারিক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে লেখেন নি।
কি রয়েছে ভুয়ো চিঠিতেবিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই ভুয়ো চিঠিতে লেখা রয়েছে, আকাশ নাগ নামে সিবিআইয়ের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্তা একটি চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। সেখানে লেখা হয়েছে, তিনি আরজিকর কাণ্ডে সিবিআইয়ের যে তদন্ত হচ্ছে সেখান থেকে তিনি সরে আসতে চান। কারণ আরজি করের তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখার পর মনে হয়েছে এটি একটি পরিকল্পিত খুন। যেসব তথ্যপ্রমাণ জড়ো করা হয়েছে সেসব একেবারে জালিয়াতি করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে রাজনীতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীদের চাপ। ওই চিঠিতে আকাশ নাগ আরও লিখেছেন, প্রাথামিকভাবে মনে করা হচ্ছে একটি সহজ মামলা কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ততই মনে হচ্ছে এর পেছনে অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষজন রয়েছে। তারাই মামলাকে প্রভাবিত করছেন। তদন্ত রিপোর্ট থেকে একটা জিনিস আমার মাথায় এসেছে এই খুনের পেছনে ৪ জন অন ডিউটি ডাক্তার রয়েছে। এরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ। ইচ্ছে থাকলেও তদন্তে পদে পদে বাধা পাচ্ছি। এই অবস্থায় তদন্ত থেকে অব্যহতি চাইছি।
লিখিত বিবৃতি প্রকাশ সিবিআইয়েরসিবিআই এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের নাম জড়িয়ে এই চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেই তড়িঘড়ি আসরে নামে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিবিআইয়ের ডিআইজি পরিচয় দিয়ে ডা আকাশ নাগ নামে এক ব্যক্তির একটি চিঠি ভাইরাল হয়েছে। ওই নামে কোনও সিবিআই অফিসার নেই। চিঠির বিষয়বস্তু একেবারেই মিথ্যে। সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে সব দিক খতিয়ে দেখছে। সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে ওই ধরনের চিঠিতে বিভ্রান্ত হবেন না।
প্রসঙ্গত সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশ আরজিকরের যে দুটি ভিন্ন ঘটনার তদন্ত করছে সেই তদন্ত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এমন একের পর এক সরকারী শীলমোহর লাগানো চিঠি বা নোটিশ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক ভুয়ো প্রচার আটকানোর জন্য আজ সুপ্রিমকোর্ট সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়ানোর পেছনে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। কারণ কোন সরকারই নির্দেশিকা বা সিবিআই এর মত কেন্দ্রীয় দপ্তরের রিপোর্ট বা চিঠি কখনও সাধারণ মানুষের মোবাইলে বা ফেসবুকে ঘোরা সম্ভব নয়। এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালালে দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হতে পারে।