কুমোরটুলি সরগরম
অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তী অধিকারী, অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত কোটাল খবর ৩৬৫ দিন এবং ৩৬৫ দিন কোর্টরুম পাবলিক চ্যানেল আজ দুপুর ৩টে থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কুমোরটুলির বিভিন্ন অঞ্চলে শুটিং, তথ্য সংগ্রহ করেছে
৩৬৫ দিন।অনেকেই পুজো বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন।কারণ অবশ্য আর জি করের ঘটনা।তাই নিয়ে অবশ্য উঠতি প্রতিবাদীরা শিল্পীদের ভাতে মারতে চেয়েছিলেন।এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি-রোজগার।সেই জায়গাতেই থাবা বসাতে চেয়েছিল এই উঠতি প্রতিবাদীরা।কিন্তু সেই আশায় একেবারে জল ঢেলে দিয়েছে মানুষ।আসন্ন গণেশ পুজোতেই প্রায় ৫০০০ মূর্তির বায়না হয়েছে কুমোরটুলিতে।আর দুর্গা ঠাকুরের বায়না হয়েছে ৪৫০০।যা গত বছরের তুলনায় বেশি।দুপুর ৩.১৫।মঙ্গলবার কুমোরটুলিতে ঢুকে দেখা গেল ,১৮ ফিটের গণেশ মূর্তি বের করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্মীরা।হাত লাগাচ্ছে ক্লাবের কিছু কর্মকর্তারাও।তার মধ্যেই একজনে সঙ্গে কথা বলে জানা,এই বিশাল ঠাকুরের মূর্তি দক্ষিণ কলকাতার ঢাকা কালবাড়ির।আগামী শনিবার পুজো বলে মঙ্গলবারই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মূর্তি।ওখান থেকেই বেরিয়েই দেখা মিলল কম বয়সী ছেলেমেয়েদের ভিড়।কেউ ঠাকুর বায়না দিতে কিংবা কাজ কতদূর তা জানতে।কারণ সামনেই গণেশ পুজো।তেমনি ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা।কুমারটুলির মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির সেক্রেটারি বাবু পালের কথায়,সারাবছর কুমোরটুলিতে মূর্তি তৈরির কাজ চলে।অক্লান্ত পরিশ্রম করে শিল্পীরা।শুধু দুর্গাপুজোতো নয়,বিশ্বকর্মা বা গণেশপুজোতেও একই রকম ব্যস্ততা থাকে এখানে।এবারেও তার কোনও বিকল্প নেই।একই রকম ব্যস্ততা রয়েছে।'অনেকেই বলছে আর জি করের প্রভাবে নাকি কুমারটুলি খা খা করছে,অনেকেই পুজো করবে না বলছে?আদেও কি তাই?এই প্রশ্নে বাবু পাল জানান,আর জি করের কোনও প্রভাবই আমাদের এখানে পড়েনি।এমনিতেই উঠতি ফটোগ্রাফারকে এবার ব্যান করা হয়েছে।ফলে ওই ফলস ভিড়টা আর নেই।তাছাড়া যেমন থাকে তেমনই রয়েছে।এদিকে,দুর্গাপুজোর আর মাত্র ১ মাস।তার আগে অবশ্য দুটি বড় বড় পুজো রয়েছে শহরে।একটি বিশ্বকর্মা অন্যটি গণেশ পুজো। তবে দুর্গাপুজোর শুরুর একসপ্তাহ আগে মহালয়ায় এখানে ভিড় দেখা যায়।চিত্রগ্রাহকরা এখানে এসে নানা ছবি তুলতে থাকেন। তাতে পরিস্থিতি জটিল আকার নেয়। আর তাই এবার মহালয়ার দিন শখের চিত্রগ্রাহকদের কুমোরটুলিতে ছবি তোলা নিষিদ্ধ করা হল।কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই তথ্য জানিয়ে দিয়েছে।এই ভিড়ের জেরে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।তার উপর কুমোরটুলিতে তৈরি হওয়া প্রতিমা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।২০২৩ সালের মহালয়ার দিন ছবি ভিডিয়ো তোলার জন্য প্রচণ্ড ভিড় হয়েছিল কুমোরটুলিতে।ভিড়ের জেরে পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়।তখন বাধ্য হয়ে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।এই বিষয়ে মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির বক্তব্য, ২০২৩ সালের মতো অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার মহালয়ার দিন শখের চিত্রগ্রাহকদের ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।পটুয়াপাড়ায় সমিতির অফিস–সহ সর্বত্র সেই নোটিশ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং দুর্গাপুজো শুরুর আগেই মন খারাপ হয়ে গেল শখের চিত্রগ্রাহকদের। আগের পরিস্থিতিও এবার পাল্টে যাচ্ছে। তাই শখের চিত্রগ্রাহকদের উপর লাগাম টানা হচ্ছে।জানা গিয়েছে, কুমোরটুলিতে আগে ছবি তোলার জন্য ৫০ এবং ১০০ টাকার টিকিট দেওয়া হতো। ৫০ টাকার টিকিট কাটলে মেয়াদ একদিন।আর ১০০ টাকার টিকিট কাটলে তার মেয়াদ তিন মাস। কিন্তু ২০২৪ সালে মহালয়ার দিন কোনও টিকিটই গ্রাহ্য হবে না। এই বিষয়ে সমিতির এক সদস্য বলেন,২০২৩ সালের মহালয়ায় পরিস্থিতি এমন হয়েছিল মাইকিং করেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তখন পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছিল।এই বছর আর একই পথে হাঁটতে নারাজ সমিতি।তাই আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।তবে সংবাদমাধ্যমকে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।এছাড়া এখন স্মার্টফোনের যুগ। প্রত্যেকের হাতেই তা আছে।তাই নিয়ে অনেকে চলে আসেন কুমোরটুলিতে।আবার ছোট ডিজিটাল ক্যামেরাও অনেকের কাছে রয়েছে।তা নিয়েও ভিড় জমান ছবি তুলতে।এমনকী সেলফি তুলতেও দেখা যায়। তারপর সেইসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।মৃৎশিল্পীদের বক্তব্য,সংস্কার মেনে মহালয়ায় একাধিক শিল্পীর ঘরে দুর্গার চক্ষুদান হয়।এই বিশেষ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে ভিড় জমান বহু শখের চিত্রগ্রাহকরা।মহালয়ার দিন কিছু পুজো কমিটি প্রতিমা নিয়ে যায়।তাই ব্যস্ততা চরমে থাকে।তখন শখের চিত্রগ্রাহকরা নানা শিল্পীর ঘরে ঢুকে ছবি তোলেন। সুতরাং ভিড় জমে যায়।সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।