৩৬৫ দিন 1 জুন বলেছিল, 3 জুন সেটাই ঘটল
৩৬৫ দিন। ১ জুন শেষ দফার ভোট শেষ হওয়ার পর সোমবার শেয়ার বাজারের সূচক যে অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পাবে তা প্রথম বলেছিল ৩৬৫ দিন। এতদিন ধরে ভাজপার যে ভক্তকুল নরেন্দ্র মোদির পেছনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল তাদের সেই লোকসান পুষিয়ে দেওয়াই ছিল তাদের প্রথম লক্ষ্য। এবং দ্বিতীয় কারণ ছিল বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। ঠিক সেই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলের মুখে, সোমবার সকালে শেয়ার বাজারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ার পর। সোমবার সকাল থেকে শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বমুখী গতি পিছনে যে পুরোটাই ভাজপা এবং নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা তা ফাঁস করে দিলেন তিনি। দিনের শেষে নিফটি ৮০০ পয়েন্ট বৃদ্ধিতে ২৩, ২২৭.৯০। সেন্সেক্স ২০০০ পয়েন্ট বেড়ে ৭৬,৫৮৩.২৯। শনিবার ভোট শেষ হয়ে যাবার পর রবিবার দিনটা বিশ্রাম ও প্রস্তুতির পর সোমবার ভোট গণনা হলে শেয়ার বাজারের এমন বারবাড়ন্ত হত না। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকিব গোখলে এক্স হ্যান্ডেলে অভিযোগ করেছেন অমিত শাহের নেতৃত্বে এই বানিয়া চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। তার অভিযোগ, গোটা নির্বাচনী নির্ঘণ্ট এই চক্রের মস্তিষ্কপ্রসূত। অমিত শাহ যে সংস্থাকে দিয়ে এক্সিট পোল করিয়েছে তারা এনডিএকে প্রায় ৪০০ পার করে দিয়েছে। অথচ মোদি নিজে সেই স্লোগান থেকে সরে এসেছেন আগেই। পুরোটাই যাওয়ার আগে যতটা পারা যায় টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনায় শরিক নির্বাচন কমিশন। তাই, সোমবার নয় ভোট গণনার দিন রাখা হয়েছে মঙ্গলবার।
শেয়ার বিশেষজ্ঞরাও অনুমান করেছিলএক্সিট পোলে নরেন্দ্র মোদিকে তৃতীয়বার নিরঙ্কুশ ভাবে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার পূর্বাভাসের পর থেকেই শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছিলেন যে সোমবার বাজার খোলার পর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে শেয়ার সূচক। বিরোধীরা এই এক্সিট পোলকে যতই ফেক বা পেইড বলে অস্বীকার করুক না কেন, টানা দেড় দিন ধরে সমস্ত সর্বভারতীয় চ্যানেলে মোদির জয়জয়কার দেখে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ধুম পড়ে যাবে। তাদের সেই অনুমান মিলে গেছে। পূর্ব পরিকল্পনা মতই সোমবার শেয়ার বাজার এক লাফে পৌঁছে গেছে রেকর্ড অংকে। গত চার বছরে রেকর্ড উত্থান হয়েছে সেন্সেক্স ও নিফটি ফিফটিতে। ১ জুন, শনিবার সপ্তম ও শেষ দফার ভোট শেষ হওয়ার পর এক যোগে সমস্ত সর্বভারতীয় চ্যানেলে শুরু হয় বুথ ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল। সমস্ত সমীক্ষাতে ভাজপার নেতৃত্বে এনডিএকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ফলাও করে জানানো হয়, নরেন্দ্র মোদি নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কাজের পরিকল্পনা করতে বিভিন্ন দপ্তরের আমলা ও মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন। শনিবার শেয়ার বাজার বন্ধ থাকে, রবিবারও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪ জুন, মঙ্গলবার ভোট গণনা শুরু হওয়ার আগে সোমবার শেয়ার বাজার থেকে মুনাফা তোলার বহু আগে থেকেই প্ল্যান ছকে রেখেছিল এই বানিয়া ফোর্স। তাদের সেই পরিকল্পনা সফল।
৪ গুণ লাভ হবেশেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের অনুমান ছিল ন্যূনতম ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সূচক। ইতিমধ্যেই ২ এর সীমানা অতিক্রম করে প্রায় তিন শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে দুই সূচকই। আগামীকাল গণনা শুরু হবার পর বেলা বারোটা নাগাদ যখন ট্রেন্ড স্পষ্ট হবে তখন এই সূচক চার শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলেই বিশেষজ্ঞদের অনুমান। তখন যদি দেখা যায় বিরোধীদের অনুমান সঠিক। অর্থাৎ, পুরো এক্সিট পোলই মনগড়া, এনডিএ সরকার গড়ছে না তখনো এই বিনিয়োগকারীদের কোনও ক্ষতি নেই। ততক্ষণে তারা তাদের বিনিয়োগ চার গুণ করে ফেলেছে। যে বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থা বা বিদেশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী ভারতের বাজার থেকে টাকা তুলে মূলত চীনের বাজারে বিনিয়োগ করেছিল তারা গত পাঁচ দিনে নতুন করে প্রায় আট হাজার লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। হলে তারাও প্রভূত লাভবান হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
আদানি, আম্বানিদের শেয়ার ঊর্ধ্বমুখীইতিমধ্যেই আদানি, আম্বানিদের কোম্পানির শেয়ার আকাশ ছুঁয়েছে। মাত্র এক বেলায় মোদিজীর প্রিয় পাত্র গৌতম আদানির কোম্পানি আদানি পোর্টের মূল্য বেড়েছে ১০ শতাংশ। অনিল আম্বানির কোম্পানিও এর থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। ভোট শুরু হওয়ার তৃতীয় দফার পর থেকে শেয়ার বাজারে যে পতনের বিষাক্ত পোকামাকড় আক্রমণ করেছিল তখন তা প্রধানত প্রতিহত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বীমা সংস্থাগুলি। এদিন তারাও লাভের মুখ দেখেছে। ব্যাংক নিফটির সূচক প্রায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পরিকাঠামো গত শিল্প সংস্থায়, এফএমসিজি, তথ্যপ্রযুক্তি এমন প্রায় সর্বক্ষেত্রেই শেয়ারের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।