বাংলায় বড় কর্মসংস্থান
৩৬৫ দিন। রাজ্যে আবার বিরাট কর্মসংস্থান করা হল। শুক্রবার বিধানসভায় ৩২ হাজার ৫৬৯ জন নিয়োগের খবর দিলেন নারী শিশু ও কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। এদিন বিধানসভায় মন্ত্রী জানান, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা নেওয়া হবে। এর মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে ১২ হাজার ২৮ জন এবং ২০ হাজার ৬৩১ জন সহায়িকা হিসেবে নিয়োগ করা হবে। মন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। নিয়োগের পদ্ধতি ও খুব দ্রুত শুরু হবে। উল্লেখযোগ্য হল, এর আগে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকার ন্যূনতম বয়স ছিল ১৮ থেকে ৪৫ বছর। বর্তমানে সেই বয়স কমিয়ে করা হয়েছে ১৮ থেকে ৩৫ বছর। পাশাপাশি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণী পাস এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়তার ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণী পাস। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার বিধানসভায় এমনটাই জানিয়েছেন নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। জেলাশাসকের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ কমিটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে নবান্ন।তবে এসব কেন্দ্রে কর্মী নিয়োগে দেরি হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেছেন মন্ত্রী। তাঁর দাবি, কেন্দ্র নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মকানুন পরিবর্তন করার জন্যই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এখন সেই সমস্যা দূর হয়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের নয়া নিয়মে অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী ও সহায়িকা, উভয় পদে আবেদনের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। এতদিন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হলেই সহায়িকা পদে আবেদন করা যেত। উল্লেখ্য, শুক্রবার বিধানসভার লবিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শশী পাঁজা জানিয়েছেন, রাজ্যে মোট ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৮১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে মহিলা কর্মী ও সহায়িকা থাকেন। বর্তমানে ২১ হাজার ৪৯২ কর্মী ও ১৩ হাজার ৯০৬টি সহায়িকার পদ শূন্য রয়েছে। সব মিলিয়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৯৮টি। বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী জানান, এই সংক্রান্ত কিছু আইনি জটিলতা প্রথমে তৈরি হয়েছিল। তা মিটলেও কেন্দ্রীয় সরকার নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মকানুনের পরিবর্তন করে দেয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও নিয়োগ করা যাচ্ছিল না। এতদিন কর্মী পদে নিযুক্তির জন্য ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক ও সহায়িকা পদের জন্য অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হতো। কেন্দ্র এই নিয়ম বদলে দু’টি পদের জন্যই উচ্চ মাধ্যমিক পাশকে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ধার্য করে। আগে নিয়োগের বয়সসীমা ছিল ১৮ থেকে ৪৫ বছর। সেটাও কমিয়ে ১৮ থেকে ৩৫ বছর করা হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আপত্তি করেছিল। তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যাঁরা সহায়িকা হয়েছেন, কর্মী পদে তাঁদের পদোন্নতি আটকাবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্য অন্তত ১০ বছর সহায়িকার কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে। রাজ্য সরকার এই নির্দিষ্ট খরচের বাইরেও কর্মী-সহায়িকাদের মাসিক ভাতার জন্য মাথাপিছু যথাক্রমে ৩,৭৫০ ও ৪,০৫০ টাকা করে দেয়। ফলে কর্মীরা সব মিলিয়ে ৮,৩৫০ টাকা এবং সহায়িকারা ৬,৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন এখন। মা ও শিশুর জন্য খাদ্য খাতে বরাদ্দ ২০১৭ সালের পর থেকে কেন্দ্র বৃদ্ধি করেনি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রকে বারবার আবেদন করা হলেও তারা বরাদ্দ বাড়ায়নি বলে অভিযোগ মন্ত্রীর। উল্লেখ্য, রাজ্যে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ঘোষণা নির্দ্বিধায় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। একদিকে যেমন নতুন শিল্পায়নের ফলে প্রচুর নিয়োগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ঠিক একই রকম ভাবে সরকারি ক্ষেত্রেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়তা নিয়োগ দেশের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সরকারি ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই এই নিয়ে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, শিশুশিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়তাদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রসূতি মায়ের দেখভাল করার পাশাপাশি জন্মের পর শিশুর শিক্ষায় বিশেষভাবে নজর দিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়করা। মিড ডে মিলের ক্ষেত্রে শিশুরা যেন পুরোপুরি ভাবে পুষ্টিগত আহার পায় সেদিকে ও বিশেষভাবে নজর দিয়েছে তারা। প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি সহায়কদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।