মৃত্যুর পর বাড়িতে পৌঁছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের প্রস্তাব
৩৬৫ দিন। বামফ্রন্ট জমানায় প্রথমে জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এবং পরবর্তীকালে বোতলে ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বারে বারে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ এবং সিপিএম এর হার্মাদরা যাঁকে আক্রমণ করেছেন, আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র সেই মমতা ছুটে যান তাঁর বাসভবনে। অথচ ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন মমতার নেতৃত্বে মিছিলের উপরে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বুদ্ধদেববাবু। যদিও পরবর্তীকালে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে একুশে জুলাই গণহত্যার ঘটনায় গঠিত কমিশনের সুপারিশ সত্ত্বেও একুশে জুলাই গণহত্যার মূল অভিযুক্ত বুদ্ধদেব বাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী পদে ২০১১ সালে শপথ নেওয়ার সময়ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সামনে গিয়ে নমস্কার করলেও প্রতি নমস্কার করে সৌজন্য দেখানোর উদাহরণ তৈরি করতে পারেননি প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০২০ সালে ভয়ংকর করণা পরিস্থিতির মধ্যেও যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেই সময় থেকে বারে বারে কখনো হাসপাতালে আবার কখনো বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে ছুটে গিয়ে তাঁর শরীর স্বাস্থ্যের খবর রেখেছেন মমতা। বিভিন্ন সময় রাজ্যের মন্ত্রীদের পাঠিয়েও তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে সহায়তা করেছেন। আজকেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে জেলা সফরে যাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি ছুটে যান বুদ্ধ বাবুর ফ্ল্যাটে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সন্তান সুচেতনকে পাশে নিয়ে মমতা বলেন, আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছি। আগামিকাল রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে আমরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চাই। তিনি দীর্ঘ দিন বিধানসভার জনপ্রতিনিধি ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, একাধিক দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু রাজ্যের পক্ষে বড় ক্ষতি। উনি যত বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন, এটা আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি ছিল। তাঁর মৃত্যুর বয়স হয়তো এখনও হয়নি। কিন্তু তাঁর শারীরিক সমস্যা ছিল, শ্বাসকষ্ট হত। আমি তাঁর পরিবারের সকলকে, সিপিএম তথা বামফ্রন্টের প্রত্যেককে এবং আমাদের প্রত্যেক সহনাগরিককে সমবেদনা জানাচ্ছি। বুদ্ধদেবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মমতা বলেন, অনেক ব্যক্তিগত কথা আছে, আজ সেটা বলার দিন নয়। কখনও সময় পেলে নিশ্চয়ই বলব। আজ পরিবারের পাশে থাকার দিন। ওদের দল নেতাকে হারিয়েছে। অন্য দল করলেও, ওদের প্রতি সম্পূর্ণ সমবেদনা রয়েছে। আমি যখন আসতাম, যতদিন ভাল ছিলেন, গল্প করতেন, অনেক কথা বলতেন। সেগুলো ব্যক্তিগত স্তরেই, বাইরে আনতে চাই না। এই খবরটা যখন আমি শুনলাম, এতটাই টেনশড হয়ে গিয়েছিলাম, কীরকম একটা লাগছিল, আমার হাতটা ঘষে যায়। পুরো গল গল করে রক্ত বেরিয়েছে। আমি ওঁর পরিবার, মীরা বৌদি, সুচেতন, সিপিএম, বামফ্রন্ট এবং সহনাগরিকদের সকলকে সমবেদনা জানাই। ওঁর অনেক অবদান, এটা সেই আলোচনার জায়গা নয় যদিও। আসুন প্রার্থনা করি, ওঁর আত্মা শান্তি পাক। মারা গেলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না, কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে থেকে যান। বার বার এই বাংলার মাটিতেই ফিরে আসুন আপনি।