রাতে কর্মস্থলে নিরাপত্তা দিতে রাত্তিরের সাথী অ্যাপ চালু
৩৬৫ দিন। বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত মহিলা চিকিৎসক ও মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তা বাড়াতে ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। ‘রাত্তিরের সাথী’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করল রাজ্য প্রশাসন। শনিবার নবান্নে এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ভার্চুয়ালি সেই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন এদিনের বৈঠকে। মহিলা চিকিৎসক, মহিলা কর্মী সহ হাসপাতালে কর্মরত যে সকল মহিলারা রয়েছেন তাদের নিরাপত্তা বাড়াতে ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পের অধীনে একটি নিরাপত্তা জনিত অ্যাপ চালু করা হবে।নতুন অ্যাপ নির্মাণ থেকে শুরু করে ‘রাতের সাথী’ ভলান্টিয়ার নিয়োগ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালগুলিতে সিসিটিভিতে মোড়া সুরক্ষা বলয় তৈরি করা, এরকম একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য প্রশাসন বলে শনিবার নবান্নে জানান মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী কী সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে?
১) রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন হস্টেল-সহ বিভিন্ন জায়গায় মহিলা কর্মজীবীদের জন্য আলাদা শৌচালয় ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
২) মহিলা কর্মজীবীদের নিরাপত্তার জন্য রাতে কর্মস্থলে রাখা হবে ‘রাত্তিরের সাথী’ নামে বিশেষ মহিলা স্বেচ্ছাসেবক।
৩) প্রতিটি কর্মস্থল সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। ২৪ ঘন্টা ধরে চলবে বিশেষ নজরদারি। সিসিটিভি দিয়ে সুরক্ষিত ‘সেফ জোন’ তৈরি করা হবে।
৪) মহিলা কর্মজীবীদের জন্য চালু করা হচ্ছে বিশেষ সঙ্কেতযুক্ত বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (মোবাইল অ্যাপ) ‘রাত্তিরের সাথী’। প্রতিটি মহিলা কর্মজীবীর ফোনে ওই মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে স্থানীয় থানার যোগাযোগ থাকবে। অর্থাৎ কোনও মহিলা কর্মজীবী বিপদে পড়লে ওই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই সরাসরি থানায় বার্তা পাঠাতে পারবেন।
৫) সম্ভব হলে মহিলাদের নাইট ডিউটি যত কম দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
৬) মহিলা কর্মজীবীদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু হচ্ছে। আপাতত ১০০ ও ১০২ নম্বরে সাহায্য চেয়ে ফোন করতে পারবেন।
৭) হাসপাতাল-মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন অফিসে মহিলাদের নৈশকালীন ডিউটি বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে মহিলা কর্মজীবীর সঙ্গে তাঁর পরিচিত কিংবা কোনও মহিলা সঙ্গিনীকে ডিউটি দেওয়া হয় তার উপরে বিশেষ জোর দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নাইট শিফটে মহিলাদের একা নয়, টিম হিসেবে ডিউটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
৮) জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে ঢোকা প্রত্যেকেরই শ্বাস পরীক্ষা (ব্রেথ এনালাইজার) করা হবে। অর্থাৎ কেউ মদ্যপ অবস্থায় রয়েছেন কিনা, তা দেখা হবে।
৯) মহিলা কর্মজীবীদের যৌন নির্যাতন রুখতে প্রতিটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ-সহ বিভিন্ন অফিসে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে বিশাখা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১০) বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্প কার্যকর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
১১) প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহিলা হস্টেলে রাত ভর চলবে বিশেষ পুলিশ পেট্রলিং।
১২) মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন থেকে চিকিৎসক-সহ প্রতিটি কর্মীকে গলায় ঝোলাতে হবে সচিত্র পরিচয়পত্র।
১৩) নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা আধিকারিক নিযুক্ত করা হচ্ছে। তাঁরাই পুরো নিরাপত্তা তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। মহিলা পুরুষ সমান অনুপাতে নিরাপত্তা রক্ষী থাকবে সমস্ত হাসপাতালে।
১৪) কোনও মহিলা চিকিৎসক কিংবা কর্মীকে একটানা ১২ ঘন্টার বেশি ডিউটি দেওয়া যাবে না, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
১৫) বেসরকারি হাসপাতাল গুলিকেও এই নির্দেশিকা গুলি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে।