রাজ্য পুলিশ সাফ জানাল
৩৬৫ দিন। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজ নাম দিয়ে যে নবান্ন অভিযান কর্মসূচির তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করা হয়েছে, নবান্নের ওই অভিযানে মহিলা এবং ছাত্রদের সামনে রেখে পিছন থেকে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে বলে খবর পেয়েছি আমরা। পুলিশকে বলপ্রয়োগে উস্কানি দিতেই এটা করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বারংবার আবেদন করা সত্ত্বেও নিয়ম অনুযায়ী কোন অনুমতি চাওয়া হয়নি অথবা কতজনের সমাবেশ হতে পারে তাও জানানো হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এই কর্মসূচির সম্পূর্ণ বেআইনি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সেই মতো প্রয়োজনে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন। আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার এর নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার। রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজ কুমার ভার্মাও জানিয়ে দেন, আগামিকাল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নামে নবান্ন অভিযানের যে পৃথক কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে, তার কোনওটির জন্যই পুলিশের থেকে কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষ যাতে এই অশান্তির ফাঁদে পা না দেন। আজ নবান্নে রাজ্য পুলিশের এই ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীনকুমার ত্রিপাঠীও।
ছাত্র সমাজের নামে অশান্তির ছকএডিজি সাউথবেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার বলেন, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট ইনপুট আছে গন্ডগোল হবে। তাই পুলিশ সব ব্যবস্থা নেবে। হায়াত হোটেল-এ মিটিং হয়েছিল। ২৫ তারিখ দুপুর ১১.২৫ নাগাদ হয়েছে মিটিং। সিসিটিভি ফুটেজ আছে।
রাজনৈতিক মদত পুষ্ট সংগঠনবিস্ফোরক অভিযোগ তুলে সুপ্রতিম সরকার বলেন, বলা হচ্ছে এই সংগঠন এবং কর্মসূচি অরাজনৈতিক। কিন্ত আমাদের কাছে খবর আছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের এক নেতা শহরের পাঁচ তারা হোটেলে একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একজন ছাত্রনেতা কী উদ্দেশ্যে পাঁচ তারা হোটেলে গিয়ে রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেন, ওই বৈঠকে বেআইনি কিছু হয়েছে কি না তার তথ্যপ্রমাণ আমরা সংগ্রহ করছি এবং সময়মতো আদালতে পেশ করব। পাশাপাশি, এডিজি সাউথ বেঙ্গল সুপ্রতিম সরকার আজ এই পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ফেসবুক পেজের প্রিন্ট আউট দেখান। ফেসবুকে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের পেজ থেকে এবিভিপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা এবং শিলিগুড়ির ভাজপা বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে ফলো করা হয়, সেই দাবি করেও সংগঠনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ওই পুলিশ কর্তা।
শুধু তাই নয়, বার বার পুলিশের পক্ষ থেকে ওই দুই সংগঠনকেই জমায়েতের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি বলেই পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
আজ দুপুরে প্রথম প্রেস কনফারেন্স করার সময় পর্যন্ত এই সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য পুলিশের কাছে কোন অনুমতি চাওয়া না হলেও বিকেলে হঠাৎ করে ইমেইল পাঠিয়ে কর্মসূচি সম্পর্কে জানানো হয় বলে জানিয়ে সন্ধ্যেবেলা আরো একবার প্রেস কনফারেন্স করেন এডিজি আইন শৃঙ্খলা এবং এডিজি সাউথ বেঙ্গল। এডিজি সাউথ বেঙ্গলের দাবি, দুপুরে আমরা জানাই দুটো সংগঠন কেউ আমাদের তথ্য দেয়নি। তারপর একটি মেল এসেছে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের তরফে। যে তারা একটা প্রোগ্রাম করবে। একটা ইন্টিমেশন দিয়েছে। তাই তাদের প্রোগ্রামের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে আমাদের প্রেস কনফারেন্সের পর চিঠি দিয়েছে। তাদেরও অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
অনুমতি না দেওয়ার পিছনে রাজ্য পুলিশের দাবি, এক, কাল ইউজিসি নেট পরীক্ষা আছে। দুই, খুব কম সময়ের মধ্যে তারা জানিয়েছে। আমরা তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি অন্য কোনও এলাকায় তারা মিছিল করলে আইন মেনে সুপ্রিম কোর্ট মেনে করলে আমরা ব্যবস্থা করব। আমরা দুপুরে বলেছিলাম এক ছাত্র নেতা এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে। আমরা বলছি সকাল ১১.২৫ নাগাদ ২৫ তারিখ এক পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এর এক নেতা হায়াত রিজেন্সি-তে দেখা করতে গিয়েছিলেন। দুদিন আগে দেখা করতে যাওয়াটা অত্যন্ত রহস্যজনক। ব্যাপারটির মধ্যে রহস্য আছে। আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। একটু আগেও সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন নাম বলব না।
অনুমতি নেওয়া হোক বা না হোক নবান্নের সামনে জমায়েত এমনিতেই বেআইনি বলে জানিয়েছেন রাজ্যপুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা। তিনি বলেন, রাজ্যের এত জায়গায় এত আন্দোলন, মিছিল হচ্ছে। পুলিশ তাদের সহযোগিতাই করছে। কিন্তু নবান্ন সংরক্ষিত এলাকা। এর আশপাশে ১৪৪ ধারা অর্থাৎ বর্তমান আইনের ১৬৩ ধারা জারি করা থাকে। যার অর্থ ওই এলাকায় পাঁচ জনের বেশি জমায়েত সম্ভব নয়। তা ছাড়া যাঁরা ওই আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন, তাঁরা আগাম অনুমতি নেননি। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন। তাই ওই মিছিল বেআইনি। আমরা অন্য যে কোনও জায়গায় মিছিলে সহায়তা করতে পারি, কিন্তু নবান্নে এই ধরনের মিছিলে সাহায্য করতে পারব না।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আজ ছাত্র সমাজ নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে। তবে পুলিশের তরফে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি নবান্ন অভিযানের বিষয়ে। নবান্ন অভিযানে শহরজুড়ে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করেছে কলকাতা পুলিশ।নবান্ন ও তার লাগোয়া এলাকা ছাড়াও শহর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার শহরজুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। ছয় হাজারেরও বেশী পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। চব্বিশ জন ডিসি থাকবে। পঁচিশ জন জয়েন্ট কমিশনার থাকবে। সূত্রের খবর, অভিযান সংগঠন কে তাদের তরফে মেইল করা হয়েছে অভিযানের বিষয়ে। কতজন লোক থাকবে, কোন রোডে অভিযান চলবে, কত গাড়ি থাকবে তবে সংগঠন উত্তরে তেমন কিছু জানাননি। যেহেতু নবান্ন অভিযানের বিষয়ে কোনো অনুমতি নেয়নি অভিযান সংগঠন তাই পুলিশ এই অভিযানকে বেআইনি অভিযানের আখ্যা দিয়েছেন।শহরের প্রতিটি থানায় খবর দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে সক্রিয় থাকার জন্যে।শহরের একাধিক পয়েন্টে বড় বড় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে এবং শহরে গোলমাল যাতে না হয় তাই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলিতে তৈরি থাকবে পুলিশ, র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স। পাশপাশি নবান্নের আশেপাশের বিভিন্ন গলির মুখ ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা থাকবে।ড্রোনের ব্যবস্থা রাখা হবে। শহরে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কর্মীরা আসছেন।বড় ধরনের গোলমাল হলে প্রয়োজনে জলকামান ও লাঠিও চালানো হবে।