৩৬৫ দিন। অস্ত্র নিয়ে যেতে হবে, ভয় পেলে চলবে না। বা ওরা চালাবে লাঠি, আমরাও চালাব লাঠি। এমনই অডিয়ো রেকর্ডিং হাতে আসার পরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের আশপাশে জমায়েত নিষিদ্ধ করল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী জমায়েত নিষিদ্ধের কথা জানিয়ে দিল কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।
স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে ঠিক যে কায়দায় মহিলাদের মধ্যরাতের মিছিলকে সামনে রেখে রড ও লাঠি সোঁটা নিয়ে আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচুর করেছিল বাম রাম, সেই মোডাস অপারেন্ডিতেই যুবভারতী স্টেডিয়ামে হামলার চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিল বিধাননগর পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ। নিরাপত্তাজনিত কারণে আজকের ডার্বি ম্যাচ বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল 24 ঘন্টা আগেই। তারপরেও দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড় এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার শাসন, বারাসাতের মতো এলাকা থেকে হাজার কয়েক লোক এবং সিপিএমের বাছাই করা হার্মাদ বাহিনীকে ভাড়া করা বাসে নিয়ে আসা হয় যুবভারতী স্টেডিয়ামের সামনে। যেখানে ভাজপা আশ্রিত গুন্ডাদের মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরিয়ে সরাসরি পুলিশের উপরে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে বিধান নগর পুলিশ। সকাল থেকেই বারে বারে তাতে উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন ভাজপা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজেও। প্রয়োজনে তিনি নিজে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পৌঁছাবেন বলেও বারে বারে ঘোষণা করেছিলেন সুকান্ত। ঘটনাস্থলে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন মানিকতলা বিধানসভা নির্বাচনে ভাজপা প্রার্থী তথা ভাজপা নেতা কল্যাণ চৌবে এবং দক্ষিণ কলকাতার এস এফ আই এফ আই নেতা-নেত্রীরা। ঝামেলায় নেতৃত্ব দিতে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মেয়ে উষসী চক্রবর্তীও।
আজ রবিবার সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে ডার্বি ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও সেই ম্যাচকে সামনে রেখে ভয়ংকর অস্ত্রশস্ত্র এবং অ্যাসিড বোমা ও পেট্রোল বোমা নিয়ে হামলা চালানোর ছক কষেছিল সিপিএম ও ভাজপা। ফেসবুক এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বাম রামের এই চক্রান্তের বিষয় জানতে পেরে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গতকাল জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল হল আজকের ডার্বি ম্যাচ।
আজ ছিল ডুরান্ড কাপের ডার্বি। ম্যাচ বাতিল প্রসঙ্গে বিধান নগর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার অনীশ সরকার জানান, কিছু লোক, কয়েকটি সংগঠন ম্যাচে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছিল। আমরা আগাম সেই খবর পেয়েছিলাম। বিষয়টি ডুরান্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। উপস্থিত ৬০-৬২ হাজার দর্শকের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগাম ঘোষণা সত্ত্বেও যুবভারতী স্টেডিয়াম এর সামনে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস অবরোধ করে আর জি কর মেডিকেল হাসপাতালে এক পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং হত্যার বিচার চাই বলে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের জার্সি পরিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় সিপিএম ও ভাজপা কর্মী সমর্থকদের।
কলকাতা পুলিশ এবং বিধাননগর পুলিশের পক্ষ থেকে বারে বারে মাইকিং করে তাদের কলকাতা শহরের যাতায়াতের ধমনী বলে পরিচিত ইএম বাইপাসে অবরোধ করতে বারণ করা সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষন রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান তুলতে থাকায় তাদের হটিয়ে দেয় পুলিশ বাহিনী।
সকাল থেকে উস্কানি সুকান্তর
ইসু যে শুধুমাত্র মুখোশ মাত্র এবং তার পিছনে রয়েছে ভাজপার সঙ্গে সিপিএমের গোপন আঁতাত তার স্পষ্ট করে দিয়ে আজ সকালেই সুকান্ত মজুমদার বলেন, পুলিশ দিয়ে আরজিকর আন্দোলনকে ঠেকাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ। দুই দলের সমর্থকদের পক্ষ থেকে আমাকে কেউ যদি ফোন করেন তাহলে আমি স্টেডিয়ামে পৌঁছে তাদের প্রতিবাদ আন্দোলনে পাশে থাকব। আমি যাব।
বামরামের চক্রান্ত ফাঁস পুলিশের
দাবি বাতিল হওয়া সত্বেও যুবভারতী স্টেডিয়ামের সামনে ই এম বাইপাস অবরোধ করে আরজিকর কে ইস্যু বানিয়ে পুলিশকে আক্রমণের ঘটনার পিছনে যে ভয়ংকর চক্রান্ত সিপিএম এবং ভাজপা মিলে করেছিল তার সম্পূর্ণ ব্লু প্রিন্ট বিধান নগর পুলিশ কমিশনারেট গোয়েন্দা সূত্রে আগেই জানতে পেরেছিল বলে জানান বিধাননগর কমিশনারেটের আধিকারিকরা। বিধাননগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অনীশ সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা বিভাগ এবং বেশ কিছু গোপন সূত্রে কিছু অডিও ক্লিপ এসে পৌঁছেছে। যেখানে আমরা জানতে পারছি সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ এই মিছিলকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর দুষ্কৃতী একটা ভায়োলেন্স ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। সেই কারণে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন কোনরকম প্ররোচনায় পা না দিয়ে এদিন ওই জমায়েত থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। কারণ আমরা মানুষের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ নম্বর ধারা, অর্থাৎ পূর্বতন সিআরপিসির ১৪৪ ধারা জারি করেছি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। ফলে সেখানে কোনরকম জমায়েত অবৈধ বলে আইনের চোখে দেখা হবে। মূলত আমাদের কাছে একাধিক অডিও ক্লিপ এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত এদিনের ওই জমায়েতে একশ্রেণীর দুষ্কৃতী অস্ত্র নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা করবেন। যে কারণে মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি তৈরি হলে তাতে পদপৃষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে। সেই জন্যই আমরা আমজনতার কাছে অনুরোধ করছি যাতে তারা এদিনের জমায়েতে না আসেন।