বামরামের চক্রান্ত ফাঁস করে রাজপথে মমতা
৩৬৫দিন। আমি বলেছিলাম বাবা–মাকে, আমরা দোষীদের শাস্তি দেব। রবিবার পর্যন্ত সময় দিন। নয়তো সিবিআইকে দিয়ে দেব।১৬৪ জনের দল তৈরি করা হয়েছিল গত এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখার জন্য। অনেককে ডাকা হয়েছিল। পুলিশ আমায় সব দেখিয়েছে।হাসপাতালের এভিডেন্স নিতে সময় লেগেছে। এই প্রক্রিয়া বাইরে বলা যায় না। আপনারা রাজনীতি করলেন। আমি এটা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না।সিপিএম–বিজেপি, আপনারা অপেক্ষা করতে পারতেন। পরিবারকে দোষ দিই না। আপনারা সময় দিলেন না। বরং আপনারা রাজনীতি করলেন। আমি এটা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। রবিবারের মধ্যে ফাঁসি চাই। রবিবারের মধ্যে সিবিআইকে বিচার করতে হবে। কামদুনি কিসে আমরা দুজনকে ফাঁসি দিতে চেয়েছিলাম। কোর্ট দিতে দেয়নি। কিন্তু এবার এই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ফাঁসি দিতে হবে। শুক্রবার মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পদযাত্রা করে আর জি কর মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে বামরাম এর বিরুদ্ধে এভাবেই হুশিয়ারি দিলেন মমতা। দোষীদের ফাঁসির সাজা দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তাঁর দলের সিদ্ধান্ত যে, দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। ফাঁসি দেওয়া হোক। আমি নির্দেশ দিইনি বলে দলের কেউ মুখে খোলেননি। কুৎসা করে গিয়েছে। আজ দেখলেন, কী হল।
আপনাদের রাগ তো লক্ষ্মীর ভাণ্ডাদের উপরপদযাত্রা শেষে ডরিনা ক্রসিংয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমি যদি নির্দেশ দিই, তাহলে বুঝবেন কত ধানে কত চাল। আজকেই তো মাত্র একবেলার ঘটনা। তাও শুধুমাত্র কলকাতায়। আমি চাই না কারোর বিরুদ্ধে কুৎসা, অপপ্রচার, অশান্তি করতে। থুতুটা উপরে ফেললে নিজের গায়ে পড়ে। আমাদের দায়িত্ব শান্তির রক্ষা করা। আমাদের দায়িত্ব বিচার দেওয়া, যাতে মানুষ স্বস্তিতে থাকে।আমি যত শান্ত থাকি, আপনাদের মঙ্গল। আমাকে আঘাত করলে আমি হয়ে যাই টর্নেডো, সাইক্লোন, সুনামি ।নিজেকে কেয়ার করি না। মানুষকে কেয়ার করি। যাঁরা দোষী, তাঁদের কথা না বলে আমাকে মারতে যান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে দেশের সামনে অপমানিত করতে হবে। মেয়েটিকে , মেয়েটির পরিবারকে সমবেদনা জানালেন না, আসলে আপনাদের হিংসা তো লক্ষীর ভান্ডারের উপর।
আমাদের পুলিশ জ্যোতিবাবু, বুদ্ধবাবুর পুলিশ নয়বাম আমলে গণহত্যার কথা মনে করিয়ে মমতা বলেন, আমাদের পুলিশ যাতে গুলি চালায় তার জন্য উসকাচ্ছে ওরা। আপনারা চাইছেন আমাদের পুলিশ গুলি চালাক। কিন্তু আমাদের পুলিশ গুলি চালায় না। আমাদের পুলিশ জ্যোতিবাবু, বুদ্ধবাবুর পুলিশ নয়। মানুষকে সাহায্য করে। মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
ক্ষমতা থাকলে আমায় টাচ করে দেখানদোষীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বলেন, মনে রাখবেন আন্দোলনে আমার জন্ম আন্দোলনের মাধ্যমেই আমার মৃত্যু হবে। ক্ষমতা থাকলে শুধু আমার গায়ে টাচ করে দেখবেন। আমায় তো অনেকবার মেরেছেন। বলুন কোথায় আসতে হবে? একা দাঁড়িয়ে থাকব। পুলিশ থাকবে না আমার সঙ্গে। কোথায় গুলি করবেন দেখব। ভাবছেন আমি চলে গেলেই আপনারা ফ্রি জোন পেয়ে যাবেন। আর নেচে নেচে বেরোবেন। এত সস্তা? যান মানুষের কাছ থেকে আগে রায় নিয়ে আসুন। কেউ বারণ করবে না। কিন্তু যদি ভাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে চমকাবেন, ধকাবেন। আমি ভয় পাইনা মাথায় রাখবেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের বলব শিক্ষা দিতে?দলনেত্রী সুর চরিয়ে বলেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি, যাদবপুরেও তাই প্রেসিডেন্সিতেও তাই। আমি বলব তাদের শিক্ষা দিতে ? কান টানলে মাথা আসবে। মনে রাখবেন আমি নির্দেশ দিইনি বলেই আমাদের দল এক তরফা সব সহ্য করে যাচ্ছে। দলের বাইরে অনেক লোক আছে যারা আমাদের ভালোবাসে তারাও কিছু বলেনি।
রাজনীতি করার আগে আমি একজন মানুষমমতার কথায়, যা যা দরকার, পুলিশ করেছে। সারা রাত ঘুমায়নি পুলিশ। আমিও রাত ২টো পর্যন্ত খোঁজ নিয়েছি। দেহ যখন বাড়িতে পৌঁছতে যাচ্ছিল, এক বিজেপি নেত্রী মাঝপথে বাবা-মাকে নামিয়ে দেন। পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তালতলা থানায় এফআইআর হয়। আমি বলেছিলাম, যত ক্ষণ না শেষকৃত্য হবে, খবর দেবে। আমি রাত জেগে খোঁজ নিয়েছি। আমি রাজনীতি করলেও তার আগে আমি মানুষ। ঘটনায় জ্বলে যাচ্ছিলাম।
সকাল ৯ টা অব্দি খোঁজ নেওয়া হল না কেন?যতদূর জানি, ওই চিকিৎসক রাত একটার সময় সবার সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছিল। তারপর দুটো নাগা শুতে গিয়েছিল। হাসপাতালে এত জন থাকেন রাতে, এই ঘটনা ঘটল কী ভাবে?’ চিকিৎসক সকাল ৯টা পর্যন্ত নিখোঁজ থাকার পরেও কেন কেউ খবর নিলেন না।
সিপি ইএম বিজেপি ভাঙচুর করেছেহাসপাতাল ভাঙচুর প্রসঙ্গে মমতা বলেন,আমি জানি, সিপিএম, বিজেপি আরজি করে ভাঙচুর করেছে। নাটক করেও যখন শেষ হয়নি। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে কুর্নিশ জানাই। মা-বোনদের। নিশ্চয়ই তাঁরা ঠিক কাজ করেছেন বলে মনে হয়। রাত ১২টার পরে ডিওয়াইএফআই নিয়েছে দলের পতাকা, বিজেপি নিয়েছে জাতীয় পতাকা। জাতীয় পতাকা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা যায় না। এই পতাকা নিয়ে গুন্ডাগিরি করা যায় না। এটা বন্ধ করা উচিত।