৩৬৫দিন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবি ড. মুহম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বঙ্গভবনে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। তার আগে এদিন দুপুরে দেশে ফিরেই ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ছাত্র যুবদের সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মুক্ত, সন্ত্রাসহীন, উন্নত সোনার বাংলা গড়ার ডাক দেন প্রফেসর ইউনূস। জনগণকে সন্ত্রাস থামানোর আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ১০ মিনিটে প্যারিস থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর তাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌ ও স্থল বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়কেরা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। বিমানবন্দরের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার পর তিনি তার ঢাকার গুলশানে নিজের বাড়িতে যান। তারপর রাত ৯ টায় অন্তর্বর্তকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন। রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে তিনি বঙ্গভবনেপৌঁছে যান তিনি । অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস শপথ গ্রহণের পর আরও ১৬ জন উপদেষ্টার শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও বিধান রঞ্জন রায়, ফারুক-ই-আজম ও সুপ্রদিপ চাকমা ঢাকায় না থাকায় তারা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। এরা কেউ প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী নন। সকলেই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন। শপথ নেওয়া ১৩ জন উপদেষ্টা হলেন— ১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ,২. ড. আসিফ নজরুল,৩. আদিলুর রহমান খান,৪. হাসান আরিফ,৫. তৌহিদ হোসেন,৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান,৭. মো. নাহিদ ইসলাম,৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া,৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন,১০. ফরিদা আখতার,১১. আ.ফ.ম খালিদ হাসান,১২. নুরজাহান বেগম ও ১৩. শারমিন মুরশিদ
তার আগে দুপুরে বিমানবন্দর থেকে বক্তব্য রাখার সময় ইউনূসের গলায় শোনা যায় শহীদ ছাত্র আবু সঈদের নাম। আবু সাঈদের কথা বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি জানান, থেকে ইউনুস বলেন,আজকে আমাদের আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কি অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক। বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে কোন যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। বলেছে যত গুলি মারো মারো আমরা সামনে এগিয়ে যাব। যার কারনে বাংলাদেশেই দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেল। সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করতেই হবে। এই স্বাধীনতাকে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। না হলেই স্বাধীনতার কোন মানে নেই।
আগের সরকারে মানুষের আস্থা ছিল নাসরকার বলে একটা জিনিস আছে। কিন্তু মানুষের কোন আস্থা নেই। মানুষ মনে করে সরকার একটা দমন পিড়নের যন্ত্র। যেখানে সুযোগ পায় কষ্ট দেয়,মেরে ফেলে। এটা হল সরকার। এটা কোন সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে। সরকার আমাকে সাহায্য করবে, রক্ষা করবে। যে সরকার হবে সেই সরকার মানুষের আস্থা অর্জন করবে। জোর করে গলা টেনে বলাতে হবে না ভালো সরকার। সে নিজের থেকেই সরকারি লোক দেখলে বলবে আমার লোক, আমায় রক্ষা করার লোক। সেই আস্থাটা ফিরিয়ে আনলে মানুষও আমাদের মধ্যে যোগ দেবে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবেএখানে আসার আগে শুনলাম আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে। মানুষ মানুষের সম্পত্তি নষ্ট করছে, অফিস আদালতে আক্রমণ করছে, সংখ্যালঘ মানুষের উপর আক্রমণ করছে। এগুলো হল ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের কাজ হলো প্রতিটা মানুষকে রক্ষা করা। মনে রাখতে হবে প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই, বোন। আমাদের যে যাত্রা শুরু হল সেই যাত্রার শত্রু হলো এরা। শত্রুকে বুঝিয়ে হোক কিংবা আইনশৃঙ্খলার হাতে দিয়ে হোক তাদের বোঝাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা নিজের হাতে তোলা যাবে না। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এমন হবে তাদের হাতে তুলে দিলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকবো যে একটা বিহিত হবে। এমনটা যাতে না হয় তাদের হাতে দুটো টাকা দিল তারা আবার ছেড়ে দিল।সেটা যাতে না হয়। আমাদের প্রথম কাজ আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। আইনশৃঙ্খলা ঠিক না হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য এগোতে পারবো না।
বিশৃঙ্খলা থেকে বিরত থাকুনদেশবাসীর কাছে আমার আবেদন আপনারা যদি আমার উপর ভরসা, বিশ্বাস রাখেন তাহলে নিশ্চিত করুন যে দেশের কোন জায়গায় কারোর উপর হামলা হবে না। আমায় যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে আপনাদের দেখাতে হবে যে আপনারা আমার কথা শুনছেন। বিশৃঙ্খলা সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন।
ছাত্ররাই নতুন বাংলাদেশের কারিগরযে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করলো। সেটাকে সামনে রেখে আরো মজবুত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তরুণ প্রজন্ম দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। পুনর্জন্মের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ পেলাম তা যেন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলতে পারে। স্বাধীনতা মানে মানুষ যেন বোঝে বাংলাদেশের পরিবর্তন মানে তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, সুযোগের পরিবর্তন, তার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন। পুরনোদের বাদ দাও, পুরনো চিন্তা নিয়ে মুক্তি হবে না। আমরা সম্ভাবনা গুলোকে নষ্ট করে দিয়েছি। আবার ২০ তলা বিল্ডিং তৈরি হবে। ছাত্রদের হাত দিয়েই তৈরি হবে। তাদের দেখানো পথেই আমরা এগোবো। আমরা একটা পরিবার আমরা যাতে একযোগে চলতে পারি।